Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়ন দর্শনে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার

কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কৃষি ও কৃষকবান্ধব। সোনার বাংলাদেশ গড়তে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমৃদ্ধ কৃষির যে কোন বিকল্প নেই এটা বঙ্গবন্ধু বেশ করে বুঝেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভাল করেই জানতেন, ‘যারা জোগায় ক্ষুধার অন্ন কৃষি হলো তাঁদের জন্যে’। তাই বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালীন সময়ের শাসনামলে কৃষি উন্নয়নে যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তার অন্যতমÑ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ; গ্রাম্য সমাজ ভিত্তিক কৃষকের জন্যে সুদমুক্ত ঋণের প্রবর্তন; স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ২২ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ; বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ১৯৭২ সালে ১৬,১২৫ মে.টন উফশী ধান বীজ, ৪৪,০০০ মে.টন পাট বীজ এবং ১,০৩৭ মে.টন গম বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ; প্রাকৃতিক পরিবশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রথম বৃক্ষরোপণ অভিযান চালুকরণ; বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের প্রথম বাজেটেই কৃষিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার, কীটনাশক ও সেচ যন্ত্রাংশ সরবরাহ; প্রাইম সাপোর্ট হিসেবে ধান, পাট, আখ প্রভৃতি ফসলের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ; গ্রামভিত্তিক সবুজ বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ; ১৯৭২-৭৩ সালের ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল কৃষি; উন্নয়নের জন্যে। যেটি বঙ্গবন্ধুর কৃষিবান্ধব নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর কৃষিবান্ধব চিন্তা শুধু গাছপালা আর ফুল ফসলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নই ছিল বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনার মূলসুর।
কৃষিতে স্নাতক শেষ করে চাকরিতে যোগদানের সময় কৃষিবিদদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হতো। ফলে চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীদের মতো কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেয়ার দাবি উঠতে থাকে স্বাধীনতার আগে থেকেই। স্বাধীনতার পরও তাদের এ দাবি অব্যাহত থাকে। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় গুরুত্ব সহকারে কৃষিবিদদের এ দাবি মেনে নেন। শুধু তাই না, ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষিবিদদের মর্যাদা হবে সবচে বেশি...।’ বঙ্গবন্ধু সেই দিনই (১৩ ফেব্রæয়ারি, ১৯৭৩) কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদায় উন্নীত করেন।
কালের পরিক্রমায় কৃষি গ্রাজুয়েটরা তাদের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।  কৃষি শিক্ষায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ বাড়তে থাকে; যদিও ১৯৭৭ সালের বেতন কাঠামোয় কৃষিবিদদের সেই মর্যাদা আবারও একধাপ নামিয়ে দেয়া হয়। কৃষিবিদদের তীব্র আন্দোলনের মুখে তদানীন্তন সরকার কৃষিবিদদের সেই হারানো সম্মান আবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। ফলে বঙ্গবন্ধুর কারণে আজকে আমরা কৃষিবিদরা গর্ব করে বলতে পারি, ‘বঙ্গবন্ধুর অবদান, কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান’।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা নানাভাবে কৃষিবিদদের অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করে। এরপর ভিন্ন ধারার রাজনীতির ডামাডোলে পরে ১৩ ফেব্রæয়ারি বিশেষ দিনটিকে মনে করার কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। অবশেষে ‘কৃষিবিদদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৩ ফেব্রæয়ারি দিনটিকে কৃষিবিদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ২০১১ সাল থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৩ ফেব্রæয়ারি দিনটিকে কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এদিন কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান ও কৃষিবিদদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়টি স্মরিত হয় অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে।
কৃষিবিদরা তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। কারণ সে সময় দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি থেকে ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছিল। এ সমস্যা সমাধানে কৃষিবিদ ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সার, বীজ, তেল ও অন্যান্য সুবিধা না দেয়ায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি। ন্যায্যমূল্যে সার প্রাপ্তির আশায় আন্দোলন করতে যেয়ে ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ, ১৮ জন নিরীহ কৃষককে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর কৃষি উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। সার, বীজ, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি, কৃষি পণ্যের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
কৃষিই আমাদের কৃষ্টির মূল। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আমরা যতই উন্নতি করি না কেন, খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদেরকে বারবার ফিরে যেতে হয় কৃষি ও কৃষকের কাছে। একবিংশ শতাব্দীর এই ক্ষণে আমরা বিজ্ঞানের সকল শাখার অভ‚তপূর্ব উন্নয়নের কথা জোর দিয়ে বলতে পারি। পুষ্টিকর মানব খাদ্যের জন্যে পৃথিবীর তাবদ মানুষকে আজও সেই সমৃদ্ধ ও গৌরবমÐিত পেশা কৃষির উপরেই নির্ভর করতে হয়।        কৃষিতে বাংলাদেশের মত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন বিশ্বের খুব কম দেশেই হয়েছে। এখন প্রয়োজন নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিতকরণ। দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ এখনও  একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ভীষণভাবে তৎপর। আশা করছি এ সমস্যার সমাধানও এখন সময়ের দাবি মাত্র।
দেশ স্বাধীনের অব্যবহিত পরে এ দেশে আবাদযোগ্য জমি ছিল ১ কোটি ৮৫ লক্ষ হেক্টর এবং মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ৯৫ লক্ষ মে.টন। বর্তমানে সেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লক্ষ হেক্টর অথচ দেশে ২০১৭-১৮ বছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৪০৭.১৪ লাখ মেট্রিক টন। ১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি আর বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ কোটিতে। আবার প্রতি বছর দেশে যোগ হচ্ছে ২৪ লক্ষ নতুন মুখ। অন্যদিকে প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এক হিসেবে মতে শিল্পকারখানা স্থাপন, নগরায়ন, আবাসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও নদী ভাঙনের ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে ৬৮,৭০০ হেক্টর করে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণেও  প্রতিদিন ২০ শতাংশ করে ফসলি জমি কমছে। মোদ্দাকথা  বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও আমাদের কৃষি কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েনি; মাথা উঁচু করে সগৌরবে চলমান রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষকদের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন তাদের সহযোগী সকল প্রতিষ্ঠান দিন-রাত পরিশ্রম করে নতুন নতুন জাত আবিষ্কার, কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন কৃষিবিদরা ও তাঁদের সহযোগীরা আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঁদেরকে সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার।
বঙ্গবন্ধুর সেই কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সফল সরকারের শাসনামলে আজ সার্বিক কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষিতে এখন বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। বর্তমান সরকার খ্যাতি পেয়েছে     ‘কৃষি বান্ধব’ সরকার হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে আজকের খাদ্যে স্বয়ম্ভর বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বলতে দ্বিধা নেই, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সব সেক্টরে বর্তমান সরকার যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতাসহ সরকারি অনুদান প্রদান করে যাচ্ছে সেটি এশিয়া মহাদেশের কোথাও নেই। এমনকি পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমনটি আছে। বিগত ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড ও ভারতে অনুষ্ঠিত দু’টি আন্তর্জাতিক কৃষি সভায় (৬ঃয ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়হভবৎবহপব ড়হ অমৎরপঁষঃঁৎব, ২০১৯, ইধহমশড়শ ,ঞযধরষধহফ ্ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঝবসরহধৎ ড়হ অমৎরপঁষঃঁৎব, জবংবধৎপয ওহফঁংঃৎু ্ খরাবষরযড়ড়ফ, ২০১৯, ইঈকঠ, কধষষুধহর, ডবংঃ ইবহমধষ, ওহফরধ) যোগদান শেষে আমার মধ্যে এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। কৃষি উন্নয়নসহ আমাদের সাম্প্রতিক সর্বিক উন্নয়ন সূচককে বিশ্ব মহল রীতিমতো বিস্ময়ের চোখে দেখছেন। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়িখ্যাত বাংলাদেশ এখন, তলাযুক্ত সম্পদশালী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। কৃষি সেক্টরে সরকারের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা, অসামান্য অর্থায়ন, নির্বিঘœ সার সরবরাহের ব্যবস্থা, বারবার সারের মূল্য হ্রাস, অধিক কৃষিভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ, কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান, ৫০-৭০% সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ এবং কৃষি প্রণোদনাসহ অনান্য কৃষিবান্ধব নীতির যথাপোযুক্ত রূপায়ন এবং কৃষক, কৃষিবিদ ও এঁদের সহযোগীদের সম্মিলিত প্রয়াসেই আজকে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারছি।
*চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে;
*সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে;
* পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;
*মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;    
* ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;
*আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম স্থানে;
*আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম স্থানে;
*কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানে;
*ফল ফসলের জাত উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা স্থানে।
বৈশ্বিক ও জাতীয় করোনা সংকট মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখার জন্য ৪% সরল সুদে কৃষি ঋণ বিতরণসহ প্রতি ইউনিয়নে কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে ৩২টি সবজি বাগান করাসহ নানাবিধ কৃষি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা সংকটের ধারাবাহিকতায় খাদ্য সংকট যেন কোনভাবেই জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি না করে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রেখে কৃষি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে চলেছেন।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে আমাদের কৃষি যেভাবে দুর্দান্ত ও দুর্বার গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে, তাতে করে আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ব সেরা স্থান দখল করবেই করবে।
আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায়।
জয়তু বঙ্গবন্ধু! মুজিববর্ষ সফল হোক।

পরিচালক (প্রশাসন), জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমী, গাজীপুর, মোবাইল: ০১৭১১৮৮৪১৯১, ইমেইল: akhtar62bd@gmail.com

বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়ন দর্শনে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার

বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়ন দর্শনে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার

কৃষিবিদ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে গেছেন। বিপন্ন জীবনের মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি জনগণের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। এ জন্য জীবনের একটি বড় সময় জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছেন। তিনি আমৃত্যু সংগ্রাম করেছেন এ দেশের শোষিত, বঞ্চিত ও অবহেলিত               কৃষকদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য। তাই তিনি সর্বদা কৃষির প্রতি শ্রদ্ধা ও অগ্রাধিকার প্রদান করতেন। বিখ্যাত দার্শনিক রুশো বলেছিলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও গৌরবমণ্ডিত শিল্প হচ্ছে             কৃষি।” বঙ্গবন্ধু দার্শনিক রুশোর বাণীকে লালন করতেন। তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, অর্থনৈতিকভাবে উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়তে কৃষির উন্নয়ন  অপরিহার্য। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থা দ্বারা বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যের জোগান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য তিনি কৃষির আধুনিকায়নে মনোনিবেশ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কৃষি উন্নয়নের একমাত্র কারিগর হচ্ছেন এদেশের কৃষক ও             কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত গ্র্যাজুয়েটরা।
কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর গৃহীত কার্যক্রম
বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির মর্যাদা প্রদান করেন, ফলে কৃষি শিক্ষায়  মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বাড়তে থাকে। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালীন শাসনামলে এ দেশের কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের উন্নয়ন বাজেটের ৫০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০১ কোটি টাকা রেখেছিলেন কৃষি উন্নয়নের জন্য, ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ, কৃষকদের জন্য সুদমুক্ত ঋণের প্রবর্তন, স্বাধীনতা পরবর্তীতে ২২ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ, ১৯৭২ সালে কৃষকদের মাঝে ধান, গম ও পাটবীজ বিতরণ, বৃক্ষ রোপণ অভিযান চালুকরণ, কৃষিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণ, সার,      কীটনাশক ও সেচযন্ত্র সরবরাহ এবং গ্রামভিত্তিক সবুজ    বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন, খাদ্যের অভাব হলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। সে জন্য তিনি মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার জন্য বাঙালি জাতি যখন অগ্রসরমান, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট ঘাতকরা তাঁকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীনতাবিরোধী মহলের হস্তক্ষেপে তাঁর সোনার বাংলা আর আশার আলো দেখেনি। কৃষি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার, অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার ফলে বিগত দিনগুলোতে বিপুল সম্ভাবনাময় কৃষি খাতে উন্নয়নের ভাটা পড়ে।
কৃষিতে বর্তমান সরকারের সাফল্য ১৯৯৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ লক্ষ্যে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, পুষ্টি উন্নয়ন, মহিলাদের কৃষিতে অংশগ্রহণ ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে সম্ভাবনার আরো এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। কৃষি খাতে আবার ভর্তুকি, সার বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সেচব্যবস্থার উন্নয়ন, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, শস্য বহুমুখীকরণসহ অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। ১৯৭২ সালে অর্থাৎ স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে যেখানে খাদ্যশস্য উৎপাদন ছিল প্রায় এক কোটি  টন সেখানে শস্যের উৎপাদন বর্তমানে প্রায় চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে এ যুগান্তকারী সাফল্য বঙ্গবন্ধুর অবদান। বাঙালি জাতি চিরদিন তাঁর অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
কৃষিতে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ এশিয়া মহাদেশের দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানে, ফল ও মাঠ ফসলের জাত উদ্ভাবনে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৩.০২ শতাংশ (তথ্য সূত্র : কৃষি ডাইরি-২০২১)। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণ সর্বোচ্চ বিবেচনায় নিয়ে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং রূপকল্প-২০৪১ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ  হাসিনার নানা পদক্ষেপের ফলে কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিণত হয়েছে। কৃষিতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কারও কৃষকদের উৎসাহিত করেছে।
বর্তমান সরকারের আমলে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কারণ
বর্তমান সরকারের আমলে চারটি প্রধান কারণে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে- ১. ফসল আবাদের জন্য কৃষক এখন বেশি পরিমাণ গুণগত মানসম্পন্ন ফসলের বীজ পাচ্ছেন, ২.              কৃষি বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ফসলের অধিকসংখ্যক জাত উদ্ভাবন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃক কৃষকপর্যায়ে বিতরণ করা সম্ভব হয়েছে, ৩. সারের মূল্যহ্রাস ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় কৃষক তার জমিতে স্বল্পমূল্যে সুষম সারপ্রয়োগ করার সুযোগ পেয়েছে, ৪. বেসরকারি বীজ আমদানিকে উৎসাহিত করায় দেশে ভুট্টা, সবজি,       গোলআলু এবং পাটবীজ সরবরাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বীজ ব্যবস্থাকে বিশেষ সুযোগ প্রদান করায় প্রাইভেট সেক্টর দেশে প্রচুর সবজি বীজ আমদানির মধ্য দিয়ে কৃষকের কাছে সবজি বীজের জোগান বৃদ্ধি করতে পেরেছে। ফলে দেশে মুক্ত পরাগী বীজের পাশাপাশি হাইব্রিড সবজি বীজের সরবরাহও বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সবজি উৎপাদন বেড়েছে।
দেশে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বর্তমান সরকার আরও যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে      ৫০-৭০% ভর্তুকি প্রদানের মাধ্যমে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ,   কৃষকের উৎপাদন খরচ হ্রাস করার জন্য বিদ্যুতের ভর্তুকি প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে ফসল উৎপাদনে প্রণোদনা প্রদান এবং কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা। ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম জোরদারকরণ, জলাবদ্ধ এলাকা, হাওড় ও দক্ষিণাঞ্চলে বিভিন্ন ক্ষুদ্র  সেচ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে ভূউপরিস্থ পানি ব্যবহার উৎসাহিতকরণ। সেচ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য সেচের আওতা বাড়ানো, পাহাড়ে ঝিরি বাঁধ, রাবার ড্যাম ইত্যাদি নির্মাণ করা।
কৃষি পণ্যের বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন বর্তমান সরকারের আরেকটি সাফল্য। পাইকারি বাজার সৃষ্টি, গ্রোয়ার্স মার্কেট, কুল চেম্বার স্থাপন, রিফার ভ্যানে পণ্য বিপণন, নতুন উদ্যোক্তা      সৃষ্টি ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিপণন ব্যবস্থায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখা সম্ভব হয়েছে। কৃষি জমি ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে বলে বৃহত্তর বরিশাল, খুলনা ও সিলেট জেলার পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার কার্যক্রম শুরু করা হয়, দেশের সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার কৃষির সার্বিক উন্নয়ন সাধনের জন্য ২০১৩ সনে একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এ         মহাপরিকল্পনার আওতায় দক্ষিণাঞ্চলের ১৪টি জেলায়       সামগ্রিকভাবে ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতসহ ১০টি প্রধান ক্ষেত্রে কর্মকাণ্ড শুরু করা হয়।
কৃষিতে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল কার্যক্রম
বর্তমান সরকারের আমলে ডিজিটাল কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে কৃষক ফসল উৎপাদন বিষয়ক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সহজে গ্রহণ করতে পারছে। কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষি বিষয়ক তথ্যপ্রবাহকে গতিশীল করতে না পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া প্রায় অসম্ভব। তাই ডিজিটাল কৃষি এখন সময়ের চাহিদা। কৃষি একটি গতিশীল বিজ্ঞান। গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে। কিন্তু এসব প্রযুক্তি সময়মতো কৃষকের কাছে না পৌঁছালে এর সুফল পাওয়া যাবে না। এসব বিষয় বিবেচনা করে সরকার ডিজিটাল কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার জনপ্রিয় করছে।
কৃষি খাতে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তি ব্যবহারের সম্ভাবনা
সরকার কৃষি খাতে ৪র্থ শিল্প বিপ্লব প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। প্রিসিশন ফার্মিং নিশ্চিতকরণ, কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্তভাবে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার, বায়োটেক গবেষণা জোরদারকরণ, বায়োটেক প্রযুক্তি বিস্তার, সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হ্রাস, তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি, ক্রপ মডেলিং, মলিকুলার ব্রিডিং, নিরাপদ খাদ্য, চাহিদা নিরূপণ, মূল্য সংযোজন, লবণাক্ততা/খরা/জলমগ্নতা ব্যবস্থাপনা, কৃষি বাণিজ্য, বীজ ব্যবস্থাপনা ইত্যাদিতে ৪র্থ শিল্পবিপ্লব প্রযুক্তি ব্যবহার সরকারের পদক্ষেপের একটি অংশ। কৃষিতে ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্তকরণ এবং শোধনসহ ন্যানো প্রযুক্তির সার, বালাইনাশক উদ্ভাবন ও ব্যবহারের মাধ্যমে উপকরণ দক্ষতা অর্জনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। পলিহাউজ, হাইটেক    গ্রিনহাউজ ফার্মিং, বায়োফার্টিলাইজার, বায়োপেস্টিসাইড ও     মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের ব্যবহার বৃদ্ধি, ভার্টিক্যাল ফার্মিং, রিসাইক্লিং এগ্রিকালচার, কৃষকের ডাটাবেজ, ডিজিটাল আইডি কার্ড প্রবর্তন, কৃষি সংশ্লিষ্ট জনবলের প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি কার্যক্রম চলমান আছে।       
সরকার কর্তৃক কৃষিক্ষেত্রে গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফলে বর্তমানে কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফসল, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রত্যেকটি খাতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হওয়ায় এখন বাংলাদেশ কেবল খাদ্য নিরাপত্তা নয় বরং পুষ্টি নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। য়

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, পরিকল্পনা, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও আইসিটি উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা।
মোবাইল :  ০১৬৭৫৭৫১৩২২; ই- মেইল : Jahangirhossain dae@gmail.com

 

বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়ন দর্শনে কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকার

কৃষিবিদ ড. মো. আখতারুজ্জামান

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন কৃষি ও কৃষকবান্ধব। সোনার বাংলাদেশ গড়তে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমৃদ্ধ      কৃষির যে কোন বিকল্প নেই এটা বঙ্গবন্ধু বেশ করে বুঝেছিলেন। বঙ্গবন্ধু ভাল করেই জানতেন, ‘যারা জোগায় ক্ষুধার অন্ন কৃষি হলো তাঁদের জন্যে’। তাই বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বল্পকালীন সময়ের শাসনামলে কৃষি উন্নয়নে যেসব যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তার অন্যতমÑ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মওকুফ; গ্রাম্য সমাজ ভিত্তিক কৃষকের জন্যে সুদমুক্ত ঋণের প্রবর্তন; স্বাধীনতা পরবর্তীকালে ২২ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ; বিনামূল্যে বা নামমাত্র মূল্যে ১৯৭২ সালে ১৬,১২৫ মে.টন উফশী ধান বীজ, ৪৪,০০০ মে.টন পাট বীজ এবং ১,০৩৭ মে.টন গম বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ; প্রাকৃতিক পরিবশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রথম বৃক্ষরোপণ অভিযান চালুকরণ; বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের প্রথম বাজেটেই কৃষিতে ভর্তুকির ব্যবস্থা গ্রহণসহ সার, কীটনাশক ও সেচ যন্ত্রাংশ সরবরাহ; প্রাইম সাপোর্ট হিসেবে ধান, পাট, আখ প্রভৃতি ফসলের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ; গ্রামভিত্তিক সবুজ বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ; ১৯৭২-৭৩ সালের ৫০০ কোটি টাকা উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকার বরাদ্দ রাখা হয়েছিল কৃষি; উন্নয়নের জন্যে। যেটি বঙ্গবন্ধুর কৃষিবান্ধব নীতির কারণেই সম্ভব হয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর কৃষিবান্ধব চিন্তা শুধু গাছপালা আর ফুল ফসলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নই ছিল বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনার মূলসুর।
কৃষিতে স্নাতক শেষ করে চাকরিতে যোগদানের সময়               কৃষিবিদদের দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে পদায়ন করা হতো। ফলে চিকিৎসক এবং প্রকৌশলীদের মতো কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার মর্যাদা দেয়ার দাবি উঠতে থাকে স্বাধীনতার আগে থেকেই। স্বাধীনতার পরও তাদের এ দাবি অব্যাহত থাকে। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় গুরুত্ব সহকারে কৃষিবিদদের এ দাবি মেনে নেন। শুধু তাই না, ঘরোয়া আলোচনায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে               কৃষিবিদদের মর্যাদা হবে সবচে বেশি...।’ বঙ্গবন্ধু সেই দিনই (১৩ ফেব্রæয়ারি, ১৯৭৩) কৃষিবিদদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সময় প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার পদমর্যাদায় উন্নীত করেন।
কালের পরিক্রমায় কৃষি গ্রাজুয়েটরা তাদের কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা মোতাবেক দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন।  কৃষি শিক্ষায় মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ বাড়তে থাকে; যদিও ১৯৭৭ সালের বেতন কাঠামোয়                কৃষিবিদদের সেই মর্যাদা আবারও একধাপ নামিয়ে দেয়া হয়। কৃষিবিদদের তীব্র আন্দোলনের মুখে তদানীন্তন সরকার কৃষিবিদদের সেই হারানো সম্মান আবার ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হন। ফলে বঙ্গবন্ধুর কারণে আজকে আমরা                 কৃষিবিদরা গর্ব করে বলতে পারি, ‘বঙ্গবন্ধুর অবদান,               কৃষিবিদ ক্লাস ওয়ান’।
বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করার পর যারা ক্ষমতায় আসেন, তারা নানাভাবে কৃষিবিদদের অবমূল্যায়ন করার চেষ্টা করে। এরপর ভিন্ন ধারার রাজনীতির ডামাডোলে পরে ১৩ ফেব্রæয়ারি বিশেষ দিনটিকে মনে করার কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। অবশেষে ‘কৃষিবিদদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ১৩ ফেব্রæয়ারি দিনটিকে কৃষিবিদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ফলে ২০১১ সাল থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ১৩ ফেব্রæয়ারি দিনটিকে কৃষিবিদ দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। এদিন কৃষিতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান ও কৃষিবিদদের মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়টি স্মরিত হয় অত্যন্ত ভক্তি ও শ্রদ্ধাভরে।
কৃষিবিদরা তাঁদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেও ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। কারণ সে সময় দেশের জনসংখ্যা সাড়ে ৭ কোটি থেকে ১৩ কোটিতে উন্নীত হয়েছিল। এ সমস্যা সমাধানে কৃষিবিদ ও কৃষকদের প্রয়োজনীয় সার, বীজ, তেল ও অন্যান্য সুবিধা না দেয়ায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারেননি। ন্যায্যমূল্যে সার প্রাপ্তির আশায় আন্দোলন করতে যেয়ে ১৯৯৫ সালের ১৫ মার্চ, ১৮ জন নিরীহ কৃষককে প্রাণ হারাতে হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর কৃষি উন্নয়নে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়। সার, বীজ, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন, খাদ্য মজুদ বৃদ্ধি, কৃষি পণ্যের সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাসহ কৃষি উন্নয়নে বিভিন্ন বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত হয়। ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
কৃষিই আমাদের কৃষ্টির মূল। বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে আমরা যতই উন্নতি করি না কেন, খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদেরকে বারবার ফিরে যেতে হয় কৃষি ও কৃষকের কাছে। একবিংশ শতাব্দীর এই ক্ষণে আমরা বিজ্ঞানের সকল শাখার অভ‚তপূর্ব উন্নয়নের কথা জোর দিয়ে বলতে পারি। পুষ্টিকর মানব খাদ্যের জন্যে পৃথিবীর তাবদ মানুষকে আজও সেই সমৃদ্ধ ও গৌরবমÐিত পেশা কৃষির উপরেই নির্ভর করতে হয়।        কৃষিতে বাংলাদেশের মত অল্প সময়ে এত উন্নয়ন বিশ্বের খুব কম দেশেই হয়েছে। এখন প্রয়োজন নিরাপদ ও পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিশ্চিতকরণ। দেশের প্রায় ১৭ কোটি মানুষের জন্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলেও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ এখনও  একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ ব্যাপারে বর্তমান সরকার এবং কৃষি মন্ত্রণালয় ভীষণভাবে তৎপর। আশা করছি এ সমস্যার সমাধানও এখন সময়ের দাবি মাত্র।
দেশ স্বাধীনের অব্যবহিত পরে এ দেশে আবাদযোগ্য জমি ছিল ১ কোটি ৮৫ লক্ষ হেক্টর এবং মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ৯৫ লক্ষ মে.টন। বর্তমানে সেই আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৫ লক্ষ হেক্টর অথচ দেশে ২০১৭-১৮ বছরে মোট খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে ৪০৭.১৪ লাখ মেট্রিক টন। ১৯৭১ সালে দেশের জনসংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৭ কোটি আর বর্তমানে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৭ কোটিতে। আবার প্রতি বছর দেশে যোগ হচ্ছে ২৪ লক্ষ নতুন মুখ। অন্যদিকে প্রতিনিয়তই আমাদের দেশের আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। এক হিসেবে মতে শিল্পকারখানা স্থাপন, নগরায়ন, আবাসন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও নদী ভাঙনের ফলে প্রতি বছর দেশ থেকে ৬৮,৭০০ হেক্টর করে কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততার কারণেও  প্রতিদিন ২০ শতাংশ করে ফসলি জমি কমছে। মোদ্দাকথা  বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো প্রাকৃতিক প্রতিক‚লতা সত্তে¡ও আমাদের কৃষি কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েনি; মাথা উঁচু করে সগৌরবে চলমান রয়েছে। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষকদের সাথে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন তাদের সহযোগী সকল প্রতিষ্ঠান দিন-রাত পরিশ্রম করে নতুন নতুন জাত আবিষ্কার,            কৃষিপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ করে যাচ্ছেন কৃষিবিদরা ও তাঁদের সহযোগীরা আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাঁদেরকে সার্বিক সহায়তা করে যাচ্ছে বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার।
বঙ্গবন্ধুর সেই কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সফল সরকারের শাসনামলে আজ সার্বিক কৃষিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। কৃষিতে এখন বহুমুখীকরণ ও বাণিজ্যিকীকরণ ঘটেছে। বর্তমান সরকার খ্যাতি পেয়েছে     ‘কৃষি বান্ধব’ সরকার হিসেবে। বঙ্গবন্ধুর কৃষি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকার কারণে আজকের খাদ্যে স্বয়ম্ভর বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে।
বলতে দ্বিধা নেই, কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সব সেক্টরে বর্তমান সরকার যেভাবে পৃষ্ঠপোষকতাসহ সরকারি অনুদান প্রদান করে যাচ্ছে সেটি এশিয়া মহাদেশের কোথাও নেই। এমনকি পৃথিবীর খুব কম দেশেই এমনটি আছে। বিগত ২০১৯ সালে থাইল্যান্ড ও ভারতে অনুষ্ঠিত দু’টি আন্তর্জাতিক কৃষি সভায় (৬ঃয ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঈড়হভবৎবহপব ড়হ অমৎরপঁষঃঁৎব, ২০১৯, ইধহমশড়শ ,ঞযধরষধহফ ্ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঝবসরহধৎ ড়হ অমৎরপঁষঃঁৎব, জবংবধৎপয ওহফঁংঃৎু ্ খরাবষরযড়ড়ফ, ২০১৯, ইঈকঠ, কধষষুধহর, ডবংঃ ইবহমধষ, ওহফরধ) যোগদান শেষে আমার মধ্যে এমন ধারণা বদ্ধমূল হয়েছে। কৃষি উন্নয়নসহ আমাদের সাম্প্রতিক সর্বিক উন্নয়ন সূচককে বিশ্ব মহল রীতিমতো বিস্ময়ের চোখে দেখছেন। আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হেনরি কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়িখ্যাত বাংলাদেশ এখন, তলাযুক্ত সম্পদশালী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ। কৃষি সেক্টরে সরকারের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা, অসামান্য অর্থায়ন, নির্বিঘœ সার সরবরাহের ব্যবস্থা, বারবার সারের মূল্য হ্রাস, অধিক কৃষিভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ, কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান,              ৫০-৭০% সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষি যন্ত্রপাতির সরবরাহ এবং কৃষি প্রণোদনাসহ অনান্য কৃষিবান্ধব নীতির যথাপোযুক্ত রূপায়ন এবং কৃষক, কৃষিবিদ ও এঁদের সহযোগীদের সম্মিলিত প্রয়াসেই আজকে আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারছি।
ি    চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে;
ি    সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে;
ি    পেয়ারা উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;
ি    মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;    
ি    ছাগল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ স্থানে;
ি    আম উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম স্থানে;
ি    আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সপ্তম স্থানে;
ি    কৃষি যান্ত্রিকীকরণে বাংলাদেশ এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানে;
ি    ফল ফসলের জাত উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বসেরা স্থানে।
বৈশ্বিক ও জাতীয় করোনা সংকট মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষি উৎপাদনের ধারা সচল রাখার জন্য ৪% সরল সুদে কৃষি ঋণ বিতরণসহ প্রতি ইউনিয়নে কালিকাপুর মডেল অনুসরণ করে ৩২টি সবজি বাগান করাসহ নানাবিধ কৃষি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম ও প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা সংকটের ধারাবাহিকতায় খাদ্য সংকট যেন কোনভাবেই জাতীয় সমস্যার সৃষ্টি না করে সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রেখে কৃষি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করে চলেছেন।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে আমাদের কৃষি যেভাবে দুর্দান্ত ও দুর্বার গতিতে সম্মুখপানে এগিয়ে চলেছে, তাতে করে আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি বিশ্ব সেরা স্থান দখল করবেই করবে।
আমরা সেই সুদিনের অপেক্ষায়।
জয়তু বঙ্গবন্ধু! মুজিববর্ষ সফল হোক। য়

পরিচালক (প্রশাসন), জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমী, গাজীপুর, মোবাইল: ০১৭১১৮৮৪১৯১, ইমেইল: akhtar62bd@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon